রবের সমীপে
ধরুন আপনি কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন, সাথে আপনার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে ভুলে গেছেন, আপনি এই ব্যাপারটিকে কিভাবে ভাববেন? যে দুই বা তিনদিনের এই সফর একভাবে কাটিয়ে দেই, বাসায় ফিরে সবকিছু ঠিকঠাক আবার শুরু করব ইনশা আল্লাহ্; কয়টা দিনেরই বা ব্যাপার! এমনই তাই না? কারণ আপনি জানেন আপনি এখন যেখানে অবস্থান করছেন এটা খুবই সংক্ষিপ্ত সময়। দ্রুত আপনি আবার আপনার আবাসস্থলে ফিরে যাবেন যেখানে আপনার সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই আছে। এই সময়টুকু মানিয়ে নিবেন, আর বাসায় ফিরে আপনার সবকিছু আপনি আপনার মত করেই পাবেন, বিষয়টি তো এমন তাই না?
এই যে এত গরম পড়ছে, আপনার বাসায় এসি নেই, তীব্র দাবদাহে শরীরে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে, আপনি অন্যের বাসার এসির দিকে তাকিয়ে ভাবেন আজ আমার একটা থাকলে আমিও একটু শান্তিতে থাকতাম। এই ভাবনা আপনাকে ভীষণ কুড়েকুড়ে খায়। কিন্তু আপনি যদি এভাবে ভাবেন যে এই গরমকাল তো আবার চলে যাবে, ঋতু পরিবর্তন হবে। আবার বর্ষা আসবে, শীত আসবে। এত বৃষ্টি হবে যে আর ভালোই লাগবেনা, এত শীত পড়ছে যে সেটাতেও টিকে থাকা কঠিন। তখনও আপনার অসুবিধা হচ্ছে,
আর আপনি ভাবছেন এটাই তো দুনিয়া। তাহলে দেখবেন কষ্ট হবে, এটা ভালো লাগবেনা ওটা ভালো লাগবেনা, আরেকজনের আরাম দেখে মনে হবে আমার এটা থাকতো, কিন্তু দিনশেষে আপনার নিশ্চিত গন্তব্যের কথা ভেবে আপনি মানিয়ে নিলেন, ভাবলেন এই যাত্রা তো অল্প সময়ের। ক'টা দিনের। এখানে কোনো কিছু মনমতো হবে না। আমার নিশ্চিত আবাসস্থলে সবকিছু পরিপূর্ণ আছে, ঠিকঠাক আছে, ওখানে গেলে শান্তি, আর কষ্ট হবে না ইনশা আল্লাহ্।
মুমিন যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে, সেটা যেমন তীব্র গরমের কাঠফাটা রোদে, তেমনি ভরা বর্ষায়, আবার প্রচন্ড শীতের হানাতেও। আমরা আমাদের এই কষ্টগুলোকে ইবাদাতে পরিণত করি। আল্লাহকে বলি আল্লাহ্ আমার কষ্ট হচ্ছে, আপনি তো দেখছেন, আমার জন্য সহজ করে দিন।আমার জন্য এই কষ্ট দূর করে দিন। আমার গুনাহগুলোকে মাফ করে দিন, আমার ইবাদাতকে সহজ করে দিন, আমার সবরকে আপনি প্রতিদানে রুপ দিন। এভাবে দু'আ করতে পারি।
আল্লাহ্ আমাদের এই ক্ষুদ্র যাত্রাকে সহজ করে দিন, দুনিয়ার কষ্ট মুসিবতের বিনিময়ে আখিরাতে ক্ষমা করে দিন, হাশরের ময়দানে উনার আরশের ছায়াতলে জায়গা দিন, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান করার তৌফিক দিন, আমাদের হিসাবকে সহজ করে দিন, আমিন সুম্মা আমিন।
এই দু'আ গুলো পড়ি:
• বৃষ্টি চাওয়ার দু'আ: (১)
তিনবার বলবেন,
اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا
হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দিন। (বুখারী ১/২২৪, নং ১০১৪; মুসলিম ২/৬১৩, নং ৮৯৭।)
• দু'আ (২):
আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা মেঘের গর্জন শুনলে কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং এই দো‘আ পড়তেন.
اَللّٰهُمَّ اسْقِنَا غَيْثاً مُغِيْثاً مَرِيْئًا مَرِيْعًا، نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ، عَاجِلًا غَيْرَ آجِلٍ
হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন বৃষ্টির পানি দান করুন যা সাহায্যকারী, সুপেয়, উর্বরকারী; কল্যাণকর, ক্ষতিকর নয়; শীঘ্রই, বিলম্বে নয়।
(আবূ দাউদ, ১/৩০৩, নং ১১৭১ আর শাইখ আলবানী সহীহ আবি দাউদে একে সহীহ বলেছেন, ১/২১৬।)
• দু'আ (৩) :
اَللّٰهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ، وَبَهَائِمَكَ، وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ، وَأَحْيِيْ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ
হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দাগণকে ও জীব- জন্তুগুলোকে পানি পান করান, আর আপনার রহমত বিস্তৃত করুন এবং আপনার মৃত শহরকে সজীব করুন।
(আবূ দাউদ ১/৩০৫, নং ১১৭৮। আর শাইখ আলবানী তাঁর সহীহ আবি দাউদে একে হাসান বলেছেন, ১/২১৮।)
• দু'আ (৪) :
اَللّٰهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا
হে আল্লাহ! মুষলধারায় উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন।
(বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ২/৫১৮, নং ১০৩২।)
'রবের সমীপে'
-হাবিবা সুলাইমান।
#habibas_ephemeris.
Comments
Post a Comment