Leaving This Country Is My Dream.



বিদেশ নিয়ে সবার অনেক স্বপ্ন থাকে, নিজের দেশ নিয়ে ত্যক্তবিরক্ত হওয়া মানুষগুলোর বেশ অভিযোগ নিজের দেশ নিয়ে, এই দেশের সবকিছু নিয়ে। যদিওবা অনেক কারনেই তারা এসব বলে, কিন্তু মূল বিষয়টা এমন যে এই দেশে ভালো কিছু নেই, যা আছে সব বিদেশে।

অথচ এই বিদেশগামী মানুষগুলোই আবার কাঁদে একটু দেশে ফেরার আশায়। এই দেশের প্রকৃতি, মাটির গন্ধ, পরিবেশ, মানুষগুলোর সাথে সময় কাটাতে ছটফট করে। আশায় দিন গুনে কবে দেশে যাব! কবে ব্যবস্থা হবে। দিন যেন শেষ হয়না। মন পড়ে থাকে সূদুর মাতৃভূমিতে। যাদের রিযিকের ব্যবস্থা নিজ মাতৃভূমিতে হয়েছে তাদের চেয়ে ভাগ্যবান দ্বিতীয় কেউ নেই। নিজ দেশে থাকা, নিজ দেশের মাঝে স্বাধীন চলাফেরার আনন্দ বিদেশে ক্ষণিক পাওয়া গেলেও সেটা চিরস্থায়ী হয় না। কারণ আর যাই হোক, ওটা আমার জাতীয়তা বহন করতে পারে না।

আমার নিজের দেশের মানুষ দাওয়াত দিয়ে যদি ডাল-ভাতও খাওয়ায়,তাতে আমার যে তৃপ্তি হবে, যা বিদেশের বিদেশি প্রতিবেশীর দামী খাবারেও হওয়া সম্ভব না। নিজের দেশে আপনি যে কোনো জায়গায় একা থাকতে পারবেন, আপনি এটা ভেবে ভালো থাকবেন যে আপনার আশেপাশে আপনার ভাষায় কথা বলা লোকজন রয়েছে, নিজের দেশের মানুষ আছে, ভয় কিসের! বিদেশের মাটিতে আমার ভাষায় কথা বলার লোক নাই, যতদূর চোখ যায় এরা তো ভিন্ন মানুষ!  এদের সংস্কৃতি ভিন্ন, চলাফেরা ভিন্ন, আত্মার টান আসে না। তাই হয়তো বছরের পর বছর সেখানের নাগরিক হয়ে থাকলেও দেশে আসার জন্যই তারা ছটফট করে, একাকী সময়ে চোখ বেয়ে অশ্রু নামে। সময় যেন কাটে না, অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয়না।

তাই নিজ দেশেই যখন আমাদের রিযিকের ব্যবস্থা হয়েছে, এটার জন্যই রবের দরবারে শুকরিয়া জানাই। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উনার জন্মভূমি মক্কাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। মাতৃভূমির প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। মহানবী (সা.) যখন মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগ করে পাড়ি জমাচ্ছিলেন ইয়াসরিবের (মদিনার পূর্বনাম) প্রতি, তখন মাতৃভূমির প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পায়। হজরত আবদুল্লাহ বিন আদি বিন হারাম (রা.) বলেন, আমি রাসূলকে (সা.) 'খাজওয়ারা' নামক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। সেখানে তিনি বলেছেন, 'আল্লাহর শপথ, (হে মক্কা) আল্লাহর জমিনে তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ... যদি তোমার কাছ থেকে আমাকে বের করে দেওয়া না হতো, তবে আমি তোমায় ছেড়ে অন্য কোথাও যেতাম না।' (তিরমিজি, ৩৯২৫) এ আবেগময়, বেদনাকাতর অভিব্যক্তি রাসূলের (সা.) দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অন্য হাদিসে হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি খায়বর অভিযানে খাদেম হিসেবে রাসূলের (সা.) সঙ্গে গেলাম। অভিযান শেষে রাসূল (সা.) যখন ফিরে এলেন, ওহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেন, 'এই পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি।' (বুখারি, ২৮৮৯)। হিজরত করে মদিনায় গমন করার পর রাসূল (সা.) প্রায়ই মক্কায় ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, 'যিনি তোমার জন্য কোরআনকে (জীবন) বিধান বানিয়েছেন, তিনি তোমাকে অবশ্যই তোমার জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনবেন।' (সূরা কাসাস, আয়াত ৮৫)। মদিনাকেও রাসূল ভালোবাসতেন। হাদিসের বর্ণনায় আছে, নবীজি (সা.) মদিনা শরীফকে খুব ভালোবাসতেন। কোনো সফর থেকে ফিরে আসার সময় সীমান্তে ওহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজির চেহারাতে আনন্দের আভা ফুটে উঠত। তিনি বলতেন, এই ওহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালোবাসে, আমরাও ওহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি। (বুখারি শরীফ ২/৫৩৯,৩/১০২৮, মুসলিম শরীফ ২/৯৯৩)।

তাই "লিভিং দিস কান্ট্রি ইজ মাই ড্রিম" - আসলেই কি তাই? সবশেষে এই দেশে ফেরার আকুতি থাকবেই, মায়ার টান থাকবেই। নিজের দেশ, নিজের ভূমি সবকিছুর চেয়ে দামী।
- Habiba Solaiman

#Leaving_this_country_is_my_dream.
#habibas_ephemeris.

Comments

Popular Posts