কিছু কথা।

 


আজ কিছু কথা লিখব। প্রথমত এখন সবাই অনলাইন নিভর্রশীল হওয়ার কারণে বন্ধুত্ব বা ভালোবাসা বলেন আর নিজের লাইফস্টাইল বলেন এ টু জেড সবকিছুই অনলাইনে প্রকাশ করেন। দ্বীনদার এবং ইসলামি দাওয়াহ প্রচারকারীরাও একই প্ল্যাটফর্মে বেশ এক্টিভ এখন। সমস্যা হলো- বর্তমানে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। যে যতটা না বাস্তবে তারচেয়ে বেশি অনলাইনে শো-অফ করতে ব্যস্ত। অথচ রিয়েল লাইফে তার প্রকৃত আইডেন্টিটি নিয়েই সন্দ্বেহ থাকে। কেউ যদি ফেমাস হচ্ছে, চারদিকে সাড়া ফেলছে, তো হয়ে গেলো আমাকেও তারমত করতে হবে, ফ্যান ফলোয়ার্স লাগবে৷ নিজের আইডি কিভাবে অন্যদের চেয়ে সেরা হবে সেই ধান্দায় যতরকম মিথ্যা আর ছল-চাতুরি অবলম্বন করা যায় সেটাই করে যাচ্ছে। ফেইসবুক আইডি বা পেজ খুলে ছেলে হয়ে যাচ্ছে মেয়ে, মেয়ে হয়ে যাচ্ছে ছেলে। শুধুমাত্র নিজেকে বিক্রি করে ফ্যান ফলোয়ার্স বাড়ানোর জন্য নিজের আত্মসম্মান টুকু হারাচ্ছে।


দ্বিতীয়ত কেউ একজন দ্বীনদারিতার লেবাস পড়ে কিছু লেখনী লিখল, নিজের কিছু মেধা খরচ করলো, অমনি না চেনা, না জানা মানুষটাকে আপু আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি, আপু-বোন-বান্ধবী হয়ে যাবে! কমেন্ট বক্স, ইনবক্সে ভালোবাসায় সয়লাব! অথচ ওপারের মানুষটার রিয়েল আইডেন্টিটি জানা নাই, ছেলে নাকি মেয়ে, অথেন্টিক কোনো সোর্স নাই জানার। যেহেতু প্রকৃত মুসলিমাহ দ্বীনদাররা ছবি কখনোই দিবে না, সেহেতু একেবারেই অজানা অচেনা কোনো মানুষকে স্রেফ আবেগের বশে আপন করে নিজের প্রাইভেসি নষ্ট করার এতটুকু কমনসেন্স তো থাকা দরকার তাইনা? আমরা তো ঘরের মানুষের সাথেও প্রাইভেস রাখি, নিজের আপন বোন/কাজিনদের/ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের খোঁজ খবর রাখি না, অথেন্টিক সোর্স ছাড়া এমন আপুদের কলিজা কেটে খাওয়াই কিভাবে? 


সম্প্রতি এক বোনের মাধ্যমে একটা ভাইরাল আইডির ব্যাপারে জানলাম। মারিয়া সিলভিয়া নামের উক্ত আইডি তার মিথ্যা ছল-চাতুরি, রিভার্টেড মুসলিমাহ সেজে এতদিন অসংখ্য বোনদের ভালোবাসা কুঁড়িয়েছে সবশেষে নিজের নফসের কাছে হেরে গিয়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছে একজন ছেলে হিসেবে। কত বড় ফিতনা! কত বড় ধোকা ভাবা যায়? তার ইনবক্সে অনেক বোন নিজেদের ছবি, অনেক পার্সোনাল ইনফরমেশন শেয়ার ও করেছেন! আল্লাহুম্মাগফিরলী! সামান্য এক মিথ্যা কাল্পনিক চরিত্র 'মারিয়া সিলভিয়া' কে ঘিরে কতগুলো মিথ্যা ঘটনার জন্ম অবশেষে যন্ত্রণাময় স্বীকারোক্তি, অপমান-অভিশাপে ভেসে যাওয়া। কি দরকার ছিল?


ফেক দুনিয়াতে নিজের ১% শেয়ার করতেও আমাকে ১০ বার ভাবতে হয়। আমি লেখালেখি করি তার মানে এই না আমাকে অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজের মিথ্যা সাজানো নাটকের আশ্রয় নিয়ে মানুষের মনে জায়গা নিতে হবে। যেমন আমি ব্লগ ফেমাস হওয়ার জন্য লিখিনা। আমি একজন সাধারণ খুবই সামান্য ব্যক্তি। আমার গন্ডি খুবই সীমিত; শুধু নিজের চিন্তাগুলো মাঝে মাঝে কিছু বুঝদার মানুষের নিকট প্রকাশ করি, দ্বীনকে প্রচারের প্রয়াসে হোক কিংবা রিলেটেড কিছু। আমার লেখা সবার জন্য না, সবার বোধগম্য হবেও না। কিন্তু আমাকে দেখে কয়েকজন একইভাবে লিখবে, নিজেকে জাহির করবে ব্যাপারটা এমন না যে আসলেই দ্বীন বা কোয়ালিটিফুল আর্টিকেল স্প্রেড করা, বরং শুধুই আমি যা করব তাদেরও তাই করতে হবে। নাম কামাই হবে, ফেমাস হবে। এই লোভ যখন ঢুকবে তখন মিথ্যার আশ্রয় নেওয়াই স্বাভাবিক। অথচ কাউকে গুনার সময় তাদের নাই ভাবখানা এমন। আজব এই জাতি! এইসব ব্যবসা বেশ ভালোই পারে। ফায়দা একমাত্র আল্লাহ্ ভালো জানেন।


যারা অন্যকে টেক্কা দিতে নিজের অযোগ্যতাকে যোগ্যতার মোড়কে সাজায়, তারা তো এভাবেই ধ্বংস হয়। ভালোবাসা অনলাইনে না দেখিয়ে অফলাইনে সীমাবদ্ধ রাখুন। সবকিছু প্রকাশের দরকার নেই, উত্তমকিছু যা নির্ধারণ হয় তা আল্লাহর তরফ থেকে, প্রকাশ হলে তা আসমান থেকেই নির্ধারণ হবে। আপনি নিজের ঘরের মানুষদের বিশ্বাস ও ভালোবাসা দিন, তারাও আপনাকে তাই দিবে। অনলাইনকে সেভাবেই জায়গা দিন যেভাবে এটি কচুরিপানার মত ভাসমান, ক্ষণিক সময়ের মাত্র। 


~ হাবিবা সুলাইমান।

লেখিকা/ব্লগার - Habiba's Ephemeris.

Comments

Popular Posts