'শেষ যাত্রা'



একটা মানুষের মৃত্যুক্ষণ ও তার পরবর্তী সময় থাকে অত্যন্ত নাজুক। যে অবস্থায় স্বীয় মানুষের নিজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই থাকে না। অতঃপর মারা যাওয়ার পর পরই তাকে তার ধর্মীয় বিধান মেনে সমাধিত করা হয় অথবা যেভাবে সে চেয়েছিলো। অনেকে অসীয়ত করে যায় যে তাকে যেন মৃত্যুর পরে এভাবে এভাবে দাফন-কাফন বা বিদায় দেওয়া হয়। কিন্তু যখন দেখছেন মৃত্যুর পরেও কিছু মানুষ লাশ নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে, বুঝতে হবে এটি সেই মানুষের জীবদ্দশায় করা হাতের কামাই।


দেখুন, জন্ম ও মৃত্যু খুবই স্পর্শকাতর জিনিস। এই অবস্থায় কারোরই নিজের কিছু করার থাকে না, সবকিছুর জন্যই অন্যের উপরে নির্ভর করে থাকতে হয়। আমরা জন্মেছি শিশু হয়ে, আবার বৃদ্ধ হলে কিংবা মারা গেলেও শিশুর মতোই হয়ে যাই। তাই আমরা বেঁচে থাকতে নিজের প্রতি যেইসব ব্যাপারে উদাসীন ছিলাম, যেমন: দ্বীনের প্রতি, আল্লাহর প্রতি, আমলের প্রতি, সেই আমলগুলোই একমাত্র অ্যাসেট বা অবলম্বন হিসেবে পড়ে থাকে তখন। এমনকি যারা জীবিত অবস্থায় কখনো পর্দাই করেননি, তাদেরকেও পর্দাবৃত করেই কবরস্থ করা হয়। কাউকে দেখতেও দেওয়া হয়না, অথচ জীবিত থাকতে তিনি সবার সামনেই নিজেকে আকর্ষণীয় রুপে উপস্থাপন করতেন। এমনকি মরা বাড়িতে এসে পরিচিতজনরা তার নানান বদঅভ্যাস নিয়ে বলাবলি করবে, যেটা জীবিত অবস্থায় তাদের কাছে এতটা পরিলক্ষিত হতো না; এমনকি তারা নিজেরাও হয়তো সেসবে লিপ্ত আছেন, যা তাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু কারো মৃত্যুর পরে তা হয়ে যায় অস্বাভাবিক ও সমালোচনার ব্যাপার। নিজের দিকে তাকানোর সময় যেন নেই।

তাহলে বেঁচে থাকতে যে জিনিসকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারেনি, মৃত্যুর পরে সেসবই চূড়ান্ত হিসাবে গণিত হয়, ঠিক তাইনা? তাহলে কিসের পিছে ছুটে চলছি আমরা? ভেবে দেখেছি কি? দিনশেষে আমাদের অর্জন কি? আমাদের প্রাপ্তি কি? কি নিয়ে যাচ্ছি আর কি রেখে যাচ্ছি? হিসাবের খাতা উল্টে দেখেছি কি?

আমার জন্ম ও মৃত্যু কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই। আমার জীবন, আমার পরিবারবর্গ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য কুরবানী হোক। আমার মৃত্যু-ও তখনই হোক, আমি সেভাবেই যেন আল্লাহর কাছে যাই, যেভাবে রব আমায় দেখতে চান, আমার উপর সন্তুষ্ট হন, আমাকে কবুল করে নেন। এটাই কামনা, এটাই আমার একান্ত আর্জি।

'শেষ যাত্রা'
- হাবিবা সুলাইমান। 

Comments

Popular Posts