নিজেকে গড়ার এখনি সময় - ৪


শিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রই আচরণে যত্নবান এমনটি নাও হতে পারে। বরং এখানেই সুশিক্ষা আর স্বশিক্ষার পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। ব্যাপক পড়াশোনা করেও "কমন-সেন্স" তৈরি করতে না পারলে অর্জিত শিক্ষা প্রয়োগে ঘাটতি চোখে পড়ে। মূলত আপনি যখন নানাধরণের মানুষের সাথে মিশবেন, তখন মানুষভেদে আচরণে ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক। তবে যারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত তারা স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াটাও জরুরি।

দেখা গেল কোনো এক মজলিসে কেউ একজনকে দেখে তার সামনেই দু'জন মানুষ কানা-কানি করছে। ব্যক্তি দু'জন তারই কাছের কেউ, বা তারই কমিউনিটির। ব্যাপার টা উক্ত ব্যক্তি খেয়াল করলেন। এবং কি ব্যাপারে তারা আলাপ করছিল সেটাও সে শুনতে পেল। এবং উক্ত মানুষগুলোর সম্পর্কে খুব খারাপ ধারণা নিয়ে সরে গেল। কিন্তু মানুষ দু'টো নিজেরাই মোটিভেশন দেয়, বড় বড় কথা বলে বেড়ায়, অথচ সামান্য কমন সেন্স টুকু খাটাতে পারলনা যে আমাদের এমন প্রকাশ্য আচরণে কারও মনে আঘাত কিংবা মন্দ ধারণা জন্মাচ্ছে কিনা।

এটি মূলত নৈতিক-মূল্যবোধের অভাব। প্রকাশ্যে অর্থাৎ সরাসরি কারও সামনে এধরণের আচরণ বর্জনীয় কেননা এতে করে যে কেউ ভাবতে পারে আলোচনা তাকে নিয়ে হচ্ছে, এতে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বেশ খারাপ লাগে ব্যাপারটা দেখতেও। মন্দ-ধারণা বা কান-কথা থেকে সেজন্য বেঁচে থাকতে হবে।

আমি অনেক অনেক শিক্ষিত গুনী মানুষের মাঝেও এই ব্যাপারগুলো দেখেছি, যেটা আমার মধ্যে তাদের ব্যাপারে খারাপ ধারণাই জন্ম দিয়েছে। এমনকি আমার ডিপার্টমেন্টের সহপাঠী, প্রতিবেশী কিংবা আত্নীয়-স্বজনদের মাঝেও।
এটি এতটাই মন্দ আচরণ যে, একবার কেউ করলে সহজেই মাথায় গেথেঁ যায়, পরবর্তীতে তাকে এভয়েড করে চলতেই ইচ্ছে করে। 

এছাড়াও কুরআনে এই ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার কঠোর হুশিয়ারি এসেছে।

সূরা মুজাদালাহ্-তে কানকথার বিরুদ্ধে সরাসরি বলা হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কানাকানি কর তখন পাপাচার, সীমালঙ্ঘন ও রাসূলের অবাধ্যতার বিষয়ে কানাকানি করো না বরং অনুগ্রহ ও খোদাভীতির ব্যাপারে কানাকানি করো যার কাছে তোমরা একত্রিত হবে। এ কানাঘুষা শয়তানের কাজ; মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্য। তবে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সে তাদের তেমন ক্ষতি করতে পারবে না।’ (আয়াত : ৯-১০)।


গুপ্তকথা বা কানাকানির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ সর্ম্পকে সূরা ‘আল হুজুরাতে’ আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করেছেন এবং তা হচ্ছে, কারো দোষ-ত্রুটি খোঁজে বেড়ানো এবং তা লোকের মধ্যে গোপনে প্রচার করা।

আয়াতে বলা হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাক, নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত: তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরমদয়ালু।’ (আয়াত : ১২)।


আপাত দৃষ্টিতে কৃতব্যাক্তির কাছে ব্যাপারটি আমলে নেওয়ার বিষয় না হলেও, কতইনা নিকৃষ্ট কাজ এটি। তাই এসব বর্জন করে সুন্দর আখলাক তৈরির মাধ্যমে রবের ভালোবাসা অর্জনের পাশাপাশি মানুষের সাথেও ভালোবাসার সম্পর্ক অটুট রাখা যায়। নিজেকে গড়ার সময় শুরু হোক এখান থেকেই।

#নিজেকে_গড়ার_এখনই_সময়।

- হাবিবা সুলাইমান।
#Habibas_Ephemeris.

Comments

Popular Posts